ফ্রুটি

তখন বয়স ছিলো ৭-৮, একদিন সন্ধ্যায় ফ্যাক্টরি ক্যানটীন এর সামনে বেঞ্চ এ বসে ফ্রুটি খাচ্ছিলাম.....
মা ফ্যাক্টরি স্কুল এর প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার সুবাদে ক্যানটীন এ কেনার পাস পেতো। সেদিন স্কুল এর পর মা আমাকে নিয়ে এসেছিল। আমাকে বাইরে বেঞ্চ এ বসিয়ে সে ভিতরে সংসারের কেনাকাটা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি বেঞ্চ এ বসে পা দোলাচ্ছি আর আকাশ দেখছি। ঘন মেঘ করে এসেছে, বৃষ্টি এলো বলে। এর মধ্যে হঠাৎ দেখি মা একটি গাঢ় সবুজ রঙের ফ্রুটির প্যাক নিয়ে এসে হাতে ধরিয়ে দিল।
আমি তো মহা আনন্দে স্ট্র দিয়ে প্যাক টা ফুঁটো করতে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে মা ফিরে গেল ভিতরে। ভালো জোরে বৃষ্টি এলো, ঠান্ডা হাওয়া বইছে। এর মধ্যে আমি মহা আনন্দে ফ্রুটি খাচ্ছি। তখনকার দিনে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের জন্য ফ্রুটি একটি বিলাসিতা, এটি এখনকার দিনের সন্তান দের বোঝার কথা নয়। তখন আমি ও সেটা বুঝতাম না, শুধু এটা জানতাম যে ফ্রুটি বা কোলা জাতীয় পানীয় খেতে চাইলে পাওয়া যেতনা, আর বেশি বায়না করলে কপালে চড় লেখা থাকতো। মাঝে মাঝে রাগ হত পছন্দের জিনিসটি না পেয়ে, তাই ভাবতাম বড় হয়ে রোজ ফ্রুটি কিনে খাব। জলের বোতল ফ্রুটি তে ভরে জখন ইচ্ছে খাব।
এখন বয়স টা ৩৫, বাস্তব বোধ হয়েছে। বুঝতে পারছি অনেক কষ্টের মধ্যে বাবা মা আমার সখ পূরণ করতে চেষ্টা করত। সারাদিন নিজের স্কুল সামলে, আমাকে স্কুল থেকে সময়ে নিয়ে এসে আবার সংসারের কেনাকাটা করতে এসেছে, হয়তো ঠিক করে দুপুরে খাওয়া টাও হয়নি, কিন্তু এসবের মধ্যে ও সে নিজে কিছু না খেয়ে আমার হাতে ফ্রুটি ধরিয়ে দিল। এটাই হয়তো মায়ের ভালোবাসা। মা কে খুব মনে পড়ে।
আজো কখনো বৃষ্টি হলে অনেক স্মৃতি মনে আসে, তার সাথে মনে পড়ে সেদিন মায়ের হাতে ধরিয়ে দেয়া গাঢ় সবুজ রঙের ফ্রুটি।